
নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হারে সনাক্ত করা হচ্ছে ডিপথেরিয়া রোগি এ পর্যন্ত ডিপথেরিয়া’নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রামক এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ২,৫২৬ জন রোহিঙ্গাকে সনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে রোহিঙ্গা সহ স্থানীয়দের রক্ষা করতে ডিপথেরিয়া প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন। অন্যদিকে চরম ঘন বসতির কারনে এবং ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে এই রোগ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ মোঃ রাসেল মোস্তফা জানান ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে বসাবাসরত রোগিঙ্গাদের মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগে মারা গেছে ২৭ জন,আর এ পর্যন্ত সম্ভাব্য ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২,৫২৬ জন। আক্রান্তদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ডাঃ দেবাশীষ শাহা জানান মূলত রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল এটা অনেকটা বুঝা যাচ্ছে। কারন তাদের মাঝে যে সব কমন রোগ ধরা পড়ছে এটা সাধারণত বর্তমান সময়ে হওয়ার কথা না। আর ডিপথেরিয়া রোগ নিয়ে অনেক কিছুর বিষয় জড়িত। হঠাৎ করে সনাক্ত না করে বলা কঠিন। তবে তাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রঞ্জন বড়–য়া বলেন বহুযুগ আগে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ডিপথেরিয়া। আর ডিপথেরিয়া রোগ বিষয়ে এখনো সম্ভাব্যতা আছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
এদিকে আইওএম কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন আমি যদিও ডাক্তার নই তবে ডাক্তারদের মতে চরম ঘন বসতির কারনে ডিপথেরিয়া আরো বেশি পরিমানে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন ধারনা করা হচ্ছে আরো বেশি পরিমান রোহিঙ্গা ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় বসাবাস করা রোহিঙ্গাদের মাঝে শুধু ডিপথেরিয়া নয় সাথে অন্যান্য সকল টিকা ও দেয়া হচ্ছে এখানে ৬১ টি কেন্দ্রে প্রায় ৪৮৮ জন কর্মী কাজ করছেন। আর ডিপথেরিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে তা শ্বসনতন্ত্রের বিশেষ করে নাক ও গলার টিস্যুকে নষ্ট করে দেয়। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে সাত দিন পরে। ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর থাকে। ক্লান্তি ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। গলা ব্যথা হয়।গলার গ্রন্থি ফুলে যায়।ঢোক গিলতে সমস্যা ও ব্যথা হয়।অনেক বেশি কাশি হয়।
তিনি আরো বলেন,দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া যখন ভালো টিস্যুকে নষ্ট করে দেয় তখন মৃত টিস্যুগুলো পুরো ধূসর আবরণ তৈরি করে রোগীর গলা ও নাকে, একে সিউডোমেমব্রেন বলে। বিষাক্ত পদার্থ রক্তস্রোতে মিশে যেতে পারে যার ফলে হার্ট, কিডনি ও নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যায়। গলার ভেতরে ধূসর আবরণ বা ফুলে যাওয়া টনসিল দেখে প্রাথমিকভাবে এ রোগ সনাক্ত করা হয়। এরপর আক্রান্ত স্থান থেকে টিস্যু নিয়ে কালচার করতে ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন মো. আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোন ডিপথেরিয়া রোগি নেই। এ রোগে আক্রান্ত রোগিদের রোহিঙ্গা ক্যম্পের সাথে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ২৮ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত প্রায় ২,৫২৬ জন ডিপথেরিয়া রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতাল, মালেশিয়ান,ইরান,ইতালিয়ান হাসপাতাল সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এই রোগে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রামক ব্যধি ডিপথেরিয়া আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্তের গলার পিছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগীতায় বাংলাদেশ সরকার ৯ ডিসেম্বর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ৭৫ টি ভ্রাম্যমান ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে ডিপথেরিয়ো রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হচ্ছে। সামনে এই কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।
পাঠকের মতামত